মৌমাছি ও মধু ফার্ম: প্রয়োজনীয়তা

১. মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের সময় সাধারণত চাকটিকে নষ্ট করে ফেলা হয়। এ কাজের সময় অনেক ক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক মৌমাছিও মারা পড়ে। এছাড়াও চাকে অবস্থিত ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হয়। এর ফলে দিন দিন মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ইদানিং ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে লোকালয়ে আশঙ্কাজনকভাবে মৌমাছির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এতেফসলের ফলনও কমে যাচ্ছে। মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মৌমাছির সংখ্যাকে বাড়ানো সম্ভব।

২. মৌমাছির বঞ্চিত মধু আমরা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকি। মধুর পুষ্টিগুণ চাড়াও নানাবিধ রোঘ উপশমকারী ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণ নিয়মে মৌচাক চেপে মধু বের করা হয়। এতে চাক থেকে মধু নিষ্কাশন যেমন সম্পূর্ণ হয় না তেমনি সেই মধুতে রয়ে যায় মোম, মৌমাছির ডিম ও বাচ্চা নিস্পোষিত রস এবং অন্যান্য আবর্জনা। পালন করা মৌমাছির চাক থেকে যান্ত্রিক উপায়ে নিষ্কাশিত মধু যেমন বিশুদ্ধ, তেমনি নিষ্কাশনও হয় পুরোপুরি।

৩. মৌচাক থেকে মোম পাওয়া যায়, কিন্তু পালন করা মৌমাচির চাক থেকে মোম সংগ্রহ করা হয় না। মোম সংগ্রহ করলে চাক ষ্ট হয়। নতুন চাক বানাতে মৌমাছির অনেক সময় লাগে। এতে মধু নিস্কাশনের পর চাক অক্ষত থাকে বলে মৌমাছিরা সাথে সাথেই আবার শুন্য কুঠুরিগুলোয় মধু মেন বিশুদ্ধ, তেমনি নিষ্কাশনও হয় পুরোপুরি।

৪. মৌচাক থেকে মোম পাওয়া যায়, কিন্তু পালন করা মৌমাছির চাক থেকে মোম সংগ্রহ করা হয় না। মোম সংগ্রহ করলে চাক নষ্ট হয়। নতুন চাক বানাতে মৌমাছির অনেক সময় লাগে। এতে মধু নিষ্কাশনের পর চাক অক্ষত থাকে বলে মৌমাছিরা সাথে সাথেই আবার শুন্য কুঠুরিগুলোরয় মধু জমাতে থাকে। এছাড়া মৌ-বাক্সে ভেতরে যে কাঠের ফ্রেম থাকে তাতে মোমের তৈরি ছাঁচ বা 'কম্ব ফাউন্ডেশন সিট' দিলে মৌমাছিরা তাড়াতাড়ি চাক তৈরি করতে পারে। এজন্য মৌমাছি পালনের মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক বেশী মধু পাওয়া সম্ভব।

৫. ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছিরা তাদের পা এবং বুকের লোমের ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়লে পরাগায়ন ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় ফল। এভাবে মৌমাছিরা পরাগায়নের মাধ্যমে হিসাবে কাজ করে ফল ও ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। বিশেষ মৌসুমে যখন কোনো বাগান বা ফসলের ক্ষেতে প্রচুর ফুল ফোনে তখন মৌমাছিসহ বাঙ্টিকে সেখানে স্থানান্তর করলে একদিকে প্রচুর মদু সঙ্গৃহীত হবে, অন্যদিকে ফল বা ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।

৬. মৌমাছি পালনকে কুটির শিল্প হিসাবে গ্রহণ করলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থার হবে। গ্রামের স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে মৌমাছি পালন একটি বাড়তি আয়ের সুযোগ দেবে।

মৌ কলোনির পরিচর্যা

আমাদের দেশে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত মধু সংগ্রহের উত্তম সময়। এছাড়াও কোনো কোনো এলাকায় ব্যতিক্রম হিসেবে অনুকূল পরিবেশে উল্লিখিত সময় ছাড়াও মধু সংগ্রহ করা যায়।

নিচে মধুঋতু পরিচর্যার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো :
» এলাকার বি-প্লান্টসের পরিচর্যা করা।
» অধিক মধু সংগ্রহের জন্য কলোনি পর্যাপ্ত বি-প্লান্টস পরিবেষ্টিত এলাকায় সাময়িকভাবে স্থানান্তর করা।
» নির্ধারিত ফুল ফোটার সময়ে মধু পাওয়ার জন্য প্রয়োজনবোধে কলোনি একত্রীকরণের ব্যবস্থা করা।
» চলাচল দরজার সম্পূর্ণ অংশ দিনের বেলায় খুলে দেয়া। তবে ঝাঁক ছাড়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হলে অবশ্যই কুইনগেট লাগাতে হবে।
» কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্রুড ও সুপার চেম্বারের মাঝে কুইন এক্সক্লুডার স্থাপন আবশ্যক।
» রানী মৌমাছির অধিক ডিম দেয়ার সুবিধার্থে ব্রুড চেম্বারে ভিত্তিচাক এবং পুরনো ভালো চাক পর্যায়ক্রমে দুটি ফ্রেমের মাঝখানে স্থাপন করা দরকার।
» একইভাবে সুপার চেম্বারেও অধিক মধু জমানোর জোগান দেয়াসাপেক্ষে ভিত্তিচাক এবং পুরনো ভালো চাক স্থাপন করা যায়।
» সুপার চেম্বারে শতকরা ৭০ ভাগ মধু জমানো কোষে ঢাকনা দিলে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করতে হবে।
» মধুঋতু শেষে সর্বশেষ মধু সংগ্রহের সময় মধুসহ কমপক্ষে একটি চাক কলোনিতে রেখে দিতে হবে।
» কোনো কারণে যথাসময়ে মধু সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে সাময়িকভাবে আরও একটি সুপার চেম্বার স্থাপন করা শ্রেয়।
» বিনা প্রয়োজনে পুরুষ ও রানী কোষ তৈরি করে থাকলে তা কেটে বাদ দিতে হবে।
» সংগৃহীত মধু আধুনিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে পরিষ্কার এয়ারটাইট পাত্রে রাখতে হবে।
» মধুঋতু শেষে সুপার চেম্বারের সব চাক এবং ব্রুড চেম্বারের অতিরিক্ত চাকগুলো রৌদ্রে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
» কোনো কোনো সময় কলোনিতে পর্যাপ্ত মৌমাছি থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক মৌমাছির দ্বারা সুপার চেম্বারে চাক তৈরি করতে অনীহা প্রকাশ পায় কিংবা চাক দিলেও তাতে মধু জমা করে না। এসব ক্ষেত্রে ব্রুড চেম্বার থেকে ২/১টি চাকের উপরের অংশ মধুসহ (আংশিক/সম্পূর্ণ) কেটে সুপার ফ্রেমের সঙ্গে লাগিয়ে সুপার চেম্বারে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া অন্য কোনো কলোনি থেকেও মধুসহ চাক সুপার ফ্রেমে এনে এধরনের কলোনির সুপার চেম্বারে স্থাপন করা যেতে পারে।
» মধুঋতুর শেষ পর্যায়ে কিছু কিছু মৌ কলোনি বিভাজন করে কলোনির সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।
» এতদ্ব্যতীত প্রয়োজন সাপেক্ষে রুটিনমাফিক পরিচর্যাও অব্যাহত রাখতে হবে। বিস্তারিত তথ্য জানতে হলে ফোন করা যেতে পারে।
লেখক : মো. আলী আশরাফ খান, মোবাইল নং-০১৭১০৪০৭০৭৪, ০১১৯৯৪২৫৫২৩, ০১৯১১৪০৫৩৬৬

মৌমাছি ও মধু ফার্ম: আয়-ব্যয়ের হিসাব

মৌমাছি পালন প্রকল্প স্থাপনের জন্য আলাদাভাবে কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আনাচে-কানাচে, ঘরের বারান্দায়, ছাদে কিংবা বাগানেও মৌ-বাক্স রাখা যায়। অ্যাপিস সেরানা প্রজাতির ৫টি মৌ-কলোনি সম্বলিত মৌ-খামার স্থাপনের জন্য মোট বিনিয়োগ হবে ১৫-১৬ হাজার টাকা। প্রতিবছর গড়ে প্রতি বাক্স থেকে ১০ কেজি মধু পাওয়া যাবে, যার বাজারমূল্য ২৫০ টাকা হিসেবে ২৫০০ টাকা। এ হিসেবে ৫টি বাক্স থেকে উত্পাদিত মধুর মূল্য দাঁড়াবে ৫–১০ কেজি – ২৫০ টাকা (প্রতি কেজি)= ১২,৫০০ টাকা। এই আয় ১০-১৫ বছর অব্যাহত থাকবে অর্থাৎ প্রথমে মাত্র একবার ১৫-১৬ হাজার টাকা ব্যয় করে প্রকল্প স্থাপন করলে মৌ-বাক্স এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি ১০-১৫ বছর ব্যবহার করা যাবে। আর কোনো বিনিয়োগ বা খরচ নেই বললেই চলে।

অন্যদিকে অ্যাপিস মেলিফেরা প্রজাতির ৫টি মৌ-কলোনি সম্বলিত মৌ-খামার স্থাপনের জন্য মোট ব্যয় হবে ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা। এক্ষেত্রেও ১০-১৫ বছর পর্যন্ত মৌ-বাক্স ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা যাবে। আর কোনো অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে না। মেলিফেরা প্রজাতির প্রতিটি মৌ-বাক্স থেকে বছরে ৫০ কেজি পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করা সম্ভব, যার বাজারমূল্য ৫০ কেজি –২৫০ টাকা (প্রতিকেজি) – ৫টি বাক্স= ৬২,৫০০ টাকা। প্রকল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে মাত্র ২৫-২৭ হাজার টাকা এককালীন বিনিয়োগ করে প্রতিবছর ৬০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে আয় করা সম্ভব। মৌ-বাক্সের সংখ্যা প্রতিবছর বৃদ্ধির মাধ্যমে এ আয় অনেকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। স্বল্প পরিশ্রমে এ ধরনের প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে একদিকে যেমন আর্থিক দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়, তেমনি পরাগায়ন প্রক্রিয়ায় সহায়তা দানের মাধ্যমে দেশের ফল ও ফসলের উত্পাদনে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা দান করা যায়।
 
 
Home, About, Contuct,
Copyright © Careers BD