মৌমাছি ও মধু ফার্ম: উপযুক্ত পরিবেশ ও পালন

উপযুক্ত পরিবেশ : 
মৌ-বাক্স রাখার জন্য নির্বাচিত স্থানটি ছায়াযুক্ত, শুকনা ও আশপাশে মৌমাছির খাদ্য সরবরাহের উপযোগী গাছ-গাছড়া দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনে কিছু কিছু ঋতুভিত্তিক গাছ জরুরি ভিত্তিতে লাগানো যেতে পারে। নির্বাচিত স্থানের আশপাশে যেন বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী এবং ধোঁয়া উত্পাদনকারী কোনো কিছু না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

পালন
যে কাঠের বাক্স মৌমাছি পালন করা হয় সেটি বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে তৈরী। তলার কাঠ, বাচ্চাঘর, মধুঘর, ঢাকনা, ও ছাদ হচ্ছে একটি মৌবাঙ্রে বিভিন্ন অংশ। মধুঘর ও বাচ্চাঘরে সারি সারি কাঠের ফ্রেম সাজিয়ে দেয়া হয়। এ ফ্রেমেই মৌমাছিরা চক তৈরি করে। কোনো গাছের গর্ত থেকে মৌমাছি ও তাদের চাক সংগ্রহ করার পর বাক্স দেয়া হয়। একটি মৌমাছি পরিবারে থাকে মাত্র একটি রানী মৌমাছি, কিছু পুরুষ এবং অধিকাংশ শ্রমিক মৌমাছি। চাক তৈরি, বাচ্চাদের লালনপালন, মধু এবং ফুলের পরাগ সংগ্রহ ইইত্যাদি সব কাজ শ্রমিক মৌমাছিরাই সম্পাদন করে। কিন্তু মৌমাছি পালন করে চাক থেকে মধু পেতে হলে একজন মৌমাছি পালককে মৌমাছিদের যত্ন নিতে হবে। বছরের বিভিন্ন ঋতুতে নানা প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এদের রোগ প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া মৌমাছি পালন তথ্য পরিচর্যার অন্তভূর্ক্ত । এখানে সংক্ষেপে এ নিয়ে কিছু আলোচনা করা হল-

ক) মৌসুমী ব্যবস্থাপনা
বিভিন্ন ঋতুতে মৌমাছির পরিচর্যাকে তিনটি ভগে ভাগ করা যায়। যেমন-মৌমাছির বংশ বৃদ্ধির সময়ে, যখন প্রকৃতিতে প্রচুর খাদ্য পাওয়া যায় তখন এবং খাদ্যসঙ্কট চলাকালে।
১. বংশ বৃদ্ধিকালে-রানী মৌমাছি যখন প্রচুর ডিম পেড়ে একটি মৌবাঙ্রে মৌমাছির সংখ্যা বাড়তে থাকে সে সময়টাই হল বদ্ধিকাল। এ সময় প্রকৃতিতে ফুলের সমারোহ দেখা যায় এবং মৌমাছিরা প্রচুর পরিমানে পরাগরেণু এবং ফুলের রস সংগ্রহ করে। বংশ বৃদ্ধিকালে বাচ্চাঘরে নতুন ফ্রেম দিতে হবে। বাঙ্ কোনো পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ রাণীকে সরিয়ে নতুন রানীর সংযোজন করতে হবে। সাধারণত বৃদিধকালের শেষ দিকে মৌমাছিরা ঝাঁক বাঁধে। ঝাঁক বেঁধে মৌমাছিরা যাতে অন্য কোথাও উড়ে চলে না যায় এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। চাকে নবনির্মিত পুরুষ, রাণী মৌমাছিরা বাঁক বেঁধে অন্য কোথাও উড়ে যাবে না। মৌমাছির সংখ্যা যদি অনেক বেশী হয় তবে তাদের একাধিক বাক্স ভাগ করে দেয়া উচিত মৌমাছির বংশ বৃদ্ধিকালে মাঝে মাঝে কলোনী পরীক্ষা করে তাদের অন্যান্য সমস্যার প্রতিও দৃস্টি রাখতে হবে।

২. খাদ্য সঞ্চয়কালে-এ সময়ে প্রকৃতিতে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। মৌমাছিদের সংগ্রহীত পরাগরেণু বাচ্চা মৌমাছিদের খাওয়ানো হয়। ফুলের রস দিয়ে মৌমাছিরা মধু তৈরি করে মধুঘরের চাকে জমা করে। মধু রাখার স্থানের যাতে অভাব না হয় এজন্য মধু ঘরে আরও নতুন চাক দিতে হবে। চাকের শতকরা ৭৫টি কঠুরি যখন ঘন মধুতে ভরে মৌমাছিরা ঢাকনা দিয়ে ফেলবে, তখন সে চাক থেকে মদু নিষ্কাশন করে নিতে হবে। প্রয়োজনবোধে মৌমাছি পালনক্ষেত্র তেকে কিছু মৌবাক্স সরিয়ে অন্য স্থানে নিতে হবে যাতে বিশেষ কোনো এলাকা থেকে মৌমাছিরা আরও বেশী মধু সঞ্চয় করতে পারে। শীতের প্রচন্ড প্রকোপে মৌমাছিদের যেন কষ্ট না হয় এজন্য শীতের রাতে মৌবাঙ্টি চট বা ছালা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

৩. খাদ্য সঙ্কটকালৈ এ সময়ে প্রকৃতিতে খাদ্য সংগ্রহ করার মতো ফুল খুব কম থাকে, ফলে মৌমাছিরা খাদ্য সঙ্কটে পড়ে। খাবারের অভাব মিটাতে এ সময় চিনির সিরাপ মিশিয়ে এই সিরাপ তৈরি করা হয়। যে পাত্রে সিরাপ পরিবেশন করা হবে সেটি বাঙ্রে ভেতরে রেখে সিরাপের পরে একটি কাঠি বা পাতা দিতে হবে, যাতে মৌমাছিরা তার ওপরে বসে রস খেতে পারে। সিরাপ রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সন্ধ্যা) পরিবেশন করা উচিত, যাতে অন্য বাঙ্রে মৌমাছিরা এসে খাবারের জন্য মারামারি না বধায়। ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে মৌবাঙ্টির প্রবেশ পথ বাতাস ও বৃদ্ধির বিপরীতমুখী করে নিরাপদ, শুল্ক স্থানে রাখতে হবে। অন্যথায় বাক্সে ছাদের উপর আবরণ দিয়ে প্রবল বৃষ্টি হাত থেকে মৌমাছিদের রক্ষা করতে হবে। খাদ্য সঙ্কটকালে কলোনী দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। বাক্স চারটি চাকের কম সংখ্যাকে চাকে মৌমাছি একত্র করে একটি মৌবাক্স স্থান করে দেয়া উচিত। খাদ্য সঙ্কট সব এলাকায় একই সময়ে দেখা দেয় না। এ জন্য মৌবাক্স এমন এলাকায় স্থানান্তর করা যায়, যেখানে প্রচুর ফুল পাওয়া যাবে। খাদ্য সঙ্কটকালে মৌমাছিদের রোগ-জীবানূ বেশী হয় বলে এ সময় কলোনীর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

খ) শত্রু এবং রোগ
বিভিন্ন প্রকার শত্রু ও রোগের আক্রমনে মৌমাছি কলোনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দু'একটি প্রধান শত্রু ও রোগের বিষয়ে এখানে আলোচনা করা হলে। মোমপোকা-ভিজে, স্যাতসেঁতে আবহাওয়ায় মোমপোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশী হয়। চাকের কুঠুরির উপরে মাকড়সার জালের ন্যায় আবরণ দেখেই বোঝা যায়। একটি মোপোকারয় আক্রান্ত ঢাকনাযুক্ত পিউপার কুঠুরির মুখ খোলা এবং ভেতরে মৃত পিউপা পাওয়া যায়। এ সমস্যার প্রতিকার হল মৌবাক্স পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পুরনো ও ময়লা চাক সরিয়ে ফেলা এবং পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে বাঙ্রে মেঝে পরিস্কার করা। মোমপোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্যারাডাইক্লোরো বেনজিন নামক ওষুধ সামান্য পরিমানে বাক্স কোণায় রেখে দিলে এই পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ময়ে রাতে বাক্সের গেইট বন্ধ করে রাখতে হবে এবং সকালে খুলে দিতে হবে। অ্যাকারাইন এ রোগ সাধারণত পূর্ণবস্ক মৌমাছিদের হয়ে থাকে। রুগ্ন মৌমাছির ডানাগুলো বিভক্ত হয়ে ইংরেজি অক্ষর 'ক' এর মতো হয়ে যায় এবং অনেক মৌমাছিকে বাক্সে সামনে বুকে হাঁটতে দেখা যায়। বাক্সে সামনে আমাশয় এর মতো হলুদ পায়খানা পড়ে থাকে। মৌমাছিরা কলোনীর মধ্যে বিশৃংখলাভাবে ঝাঁক বেঁধে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্যারালাইসিস হতে দেখা যায়। আক্রান্ত রানী ডিম দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ্যাকারাইন হতে দেখা যায়। এ্যাকরাইন রোগের প্রতিকার হল-মৌবাঙ্রে ভেতরে মিথাইল স্যালিসাইলেটের বাষ্প দেয়া। এজন্য ছোট একটি বোতলে মিথাইল স্যালিসাইলেট নিয়ে রবার কর্ক দিয়ে মুখ বন্ধ করতে হবে।
মৌমাছি চাষ ও প্রশিক্ষনের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন
মতি এন্ড সন্স (একটি বিসিক প্রকল্প)
৪৯/৩, লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, কোতয়ালী, ঢাকা
মোবাইল: ০১৭১২-০৬৯০৬২
এছাড়া মৌমাছি পালন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে বিসিকের যে কোনো কার্যালয়ে যোগাযোগ করা যেতে পারে। টেলিফোন করতে পারেন : ০১১৯৯৪২৫৫২৩, ০১৭১০৪০৭০৭৪ অথবা ০১৯১১৪০৫৩৬৬ নম্বরে।

কর্মজীবীদের করনিয়

যতই ঝামেলা থাকুক, কর্মজীবীকে মানিয়ে চলতেই হবে কাজের জায়গায়। ঠিক রাখতে হবে শরীর-স্বাস্থ্য আর স্মার্টনেস। কর্মজীবী পুরুষদের জন্য রইল বেশ কিছু টিপস

* সকালে একটু আগেভাগেই ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। মনও যেমন ফুরফুরে থাকবে আর সময়মতো কর্মক্ষেত্রে পৌঁছে কাজে মন দেওয়াটাও সহজ হবে।
* যাঁরা সারা দিন অফিস বা কর্মক্ষেত্রে থাকেন, তাঁদের সকালে গোসল করে বের হওয়া ভালো। এতে আপনাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত লাগবে, কাজের প্রতিও আগ্রহ বাড়বে।
* অফিস থেকে ফিরে আবার গোসল করে নিতে পারেন। সারা দিনে শরীরে জমা ময়লা আর ক্লান্তি দুই-ই দূর হয়ে ঘুমটা অনেক ভালো হবে।
* প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করার অভ্যাস করুন। সুগন্ধি সাবান বাদ দিয়ে ডেটল-জাতীয় সাবান ব্যবহার করা ভালো। এগুলো রোগজীবাণু প্রতিরোধে বেশি কার্যকর।
* পরের দিন কী কী কাজ করবেন বা কার সঙ্গে কখন দেখা করবেন, তা আগের দিন রাতে ঘুমানোর আগেই পরিকল্পনা করে রাখুন। মনে না থাকার আশঙ্কা থাকলে ডায়েরি, মোবাইল ফোন বা নির্দিষ্ট কোথাও নোট করে রাখতে পারেন। এতে পরের দিন পরিকল্পনামাফিক কাজ করা সহজ হবে।
* বেশি রাত জাগার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। এতে সকালের ঘুম ভাঙতে দেরি ও কষ্ট হয়, কাজেরও ক্ষতি হয়। বেশি দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে আপনার সারা দিনের পরিকল্পনাই এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া রাত জাগা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
* কর্মক্ষেত্রের একাধিক পোশাক রাখুন। এক পোশাক বারবার না পরে এক দিন পরার পরই ধুয়ে ফেলুন। সব সময় ধোয়া ও আয়রন করা কাপড় পরার চেষ্টা করবেন।
* ঘামের দুর্গন্ধে যেন আপনার পাশের লোকটির কষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে ডিওডরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
* সুগন্ধি অর্থাৎ পারফিউম বা বডি স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই তা যেন খুব বেশি কড়া না হয়।
* এক থেকে তিন দিন পর পর চুলে শ্যাম্পু করুন। শ্যাম্পু করার পর চুল শুকিয়ে তাতে হেয়ার ক্রিম, জেল বা হারবাল অয়েল দিতে পারেন। এতে চুলের সৌন্দর্য বাড়বে।
* রোদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সানস্ক্রিনসমৃদ্ধ জেন্টস ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
* অনেকের সারা বছরই ঠোঁট ফাটে। তাঁরা লিপজেল সঙ্গে রাখুন।
* ত্বকের বাড়তি যত্ন নিতে জেন্টস উপটান ব্যবহার করুন। জেন্টস পারলার থেকে মাসে একবার ফেসিয়ালও করাতে পারেন।
* বাইরের ধুলাবালির কারণে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়। সে ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করলে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়। রুমালও ব্যবহার করা যেতে পারে।
* সব সময় সঙ্গে রুমাল ও টিস্যু পেপার রাখুন।
* বাসে বা পথঘাটে চলার ক্ষেত্রে মাথায় ক্যাপ পরলে বাইরের ধুলাবালি থেকে চুল বাঁচানো যায়।
* বাইরে রোদ ও ধুলাবালি এড়াতে ব্যক্তিত্ব ও পোশাকের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রোদচশমা ব্যবহার করুন।
* জুতা মোছার জন্য আলাদা একটি ছোট্ট রুমাল রাখতে পারেন।
* যেসব অফিসে পোশাক নির্দিষ্ট করে দেওয়া নেই, সেসব ক্ষেত্রে জাঁকালো বা চোখধাঁধানো পোশাক পরিহার করে মার্জিত ও ভদ্র পোশাক পরুন।
* চুল ঝুঁটি, গলায় চেইন, হাতে আংটি_এগুলো সাধারণত পেশাদারি ক্ষুণ্ন করে।
* অনেক সময় মোজা না ধোয়ার ফলে দুর্গন্ধ হয়। মোজা নিয়মিত ধুয়ে ব্যবহার করুন।
* নিয়মিত চুল ও নখ কেটে ছোট রাখুন।
* গ্যাস্ট্রিক, অ্যালার্জি, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ থাকলে প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গেই রাখুন। কারণ প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে এসব নাও থাকতে পারে।

ভালো চাকরি কী এবং কেন?

অনেকেই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিকে শ্রেষ্ঠ চাকরি মনে করেন। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন সরকারি চাকরি শ্রেষ্ঠ চাকরি, তাহলে যে উত্তর পাওয়া যাবে সেগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঠিক গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি কারণগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যও নয়। তাহলে ভালো চাকরি বলতে আমরা আসলে কী বুঝব? ভালো চাকরির বৈশিষ্ট্য কী হওয়া উচিত?

ভালো চাকরি বলতে অনেকেই যা মনে করেন
* ফিসে বসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে কাজ করতে হয় (আসলে কাজ কিছুই না, হাজিরা দিলেই চলে)। আধুনিক ইন্টেরিয়র। আলাদা রুম, টেবিল-চেয়ার, আলাদা ফোন। অফিসের বাইরে রোদ-বৃষ্টিতে ঘোরাঘুরির কোনো কাজ নেই।
* বেতন যা প্রয়োজন তার দ্বিগুণ। তা ছাড়া মোবাইল ফোনের বিল অফিস দেয়।
* অফিস ৯টা থেকে ৫টা। ছুটির দিনে অফিসে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
* সপ্তাহে দুদিন ছুটি। শুক্র ও শনি।
* বেতনের পাশাপাশি বোনাস, ভাতা, ইনসেনটিভ, ওভারটাইম, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং এ বিষয়ক আর যা যা হতে পারে তার সবই আছে।
* গাড়ি এসে বাসা থেকে নিয়ে যায়, আবার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায়।
* দুপুরে খাওয়ার জন্য অফিসে ক্যান্টিন আছে, বাসা থেকে খাবার নিতে হয় না।
* প্রশাসন কড়াকড়ি নয়। মাঝে দেরি করে গেলেও বস কড়া কথা বলেন না। উপরন্তু চাইলেই ছুটি পাওয়া যায়। এ ছাড়া বার্ষিক ছুটি, অসুস্থ থাকার ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি ও অন্যান্য সব ছুটির ব্যবস্থা আছে। ছুটি না নিলে টাকা পাওয়া যাবে। বার্ষিক ছুটি নিলে ছুটি কাটানোর ভাতা পাওয়া যাবে।
* মেয়েদের ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বাচ্চাদের জন্য অভ্যন্তরীণ ডে-কেয়ার। অসুস্থ হয়ে নিজে হাসপাতালে ভর্তি হলে সব খরচ অফিসের। আর নিকটাত্মীয় ভর্তি হলে ৭৫ শতাংশ খরচ অফিসের।
* প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা হোক বা না হোক মাসের ৫ তারিখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রস্তুত। উপরন্তু বদলি হওয়ার আশঙ্কা নেই। সেই সঙ্গে বছর বছর পদোন্নতি, নইলে বেতন তো বাড়বেই।
উপরোলি্লখিত বৈশিষ্ট্যগুলো এক সময় ভালো বা শ্রেষ্ঠ চাকরির মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে শ্রম আইন অনুযায়ী এর অনেক বৈশিষ্ট্যই অত্যাবশ্যক। ভালো বা মন্দ বলে কিছু নেই। এটা শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের অধিকার। সময় পাল্টেছে, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে, ভালো চাকরির মাপকাঠিও আরো আধুনিক হয়েছে। কাজ করতে হবে না; কিন্তু অনেক বেতন পাওয়া যাবে_এটা একজন শিক্ষিত ও মেধাবী কর্মকর্তার কাছে ভালো চাকরি হতে পারে না।

ভালো চাকরির ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রাখা উচিত
* প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি বা প্রতিষ্ঠান কতটা বিখ্যাত এটা একটা ভালো চাকরির সাধারণ মাপকাঠি।
* আপনার ক্যারিয়ারের সঙ্গে আপনার পদ কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। ধরুন, আপনি বিপণন বিষয়ে পারদর্শী। প্রতিষ্ঠান আপনাকে যদি দীর্ঘদিন ধরে ভোক্তাসেবা বিভাগে নিযুক্ত রাখে, আপনি কি এমন অবস্থায় এ চাকরিকে ভালো চাকরি বলবেন? নিশ্চয়ই না।
* আপনার পদ ও যোগ্যতার সঙ্গে সমন্বয় থাকা দরকার। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে মানানসই না রেখে যদি দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে আপনাকে ব্যবস্থাপক বা বিভাগীয় প্রধান করা হয়, তাতে সত্যিকার অর্থে আনন্দিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং আতঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, এই পদে একজনকে যে দক্ষতা প্রদর্শন করতে হয় তা আপনার নেই বলে এই পদে আপনার সফল হওয়া অনেক কঠিন। দ্বিতীয়ত, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়া আপনার জন্য একই কারণে কঠিন হবে। আবার যুক্তিসংগতভাবে এর চেয়ে নিচের পদেও নামতে পারবেন না। এ এক মহাবিপদ! ফলে যেসব প্রতিষ্ঠানে বা চাকরিতে যোগ্যতা যাচাই না করেই দ্রুত একের পর এক পদোন্নতি দেওয়া হয়, তা চাকরিজীবীর জন্য শুভ সংবাদ নয়।
* চাকরিতে কাজ করতে করতে আপনার শেখার সুযোগ থাকা চাই। এমন কাজ করছেন যেখানে আপনার আর শেখার কিছু নেই। একই কাজ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর করেই যাচ্ছেন, নতুন কিছু শেখার নেই, সে চাকরি ভালো চাকরি হতে পারে না। দায়িত্ব একই হতে পারে; কিন্তু তাতে আপনার দক্ষতার স্তরের পরিবর্তন হতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদোন্নতিও হতে হবে। তবেই তাঁকে ভালো চাকরি বলা যেতে পারে।
হঅফিসে নারী-পুরুষের একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ। বিশেষ করে নারী কর্মজীবীদের নিরাপত্তা, সম্মান ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে কাজ করতে পারার সুযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বেশি বেতনের বা উচ্চতর পদবির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
* আপনি যে কাজ পছন্দ করেন সে দায়িত্ব পেলেন কি না দেখে নেবেন। এমন কাজ খুব বেশি সময় ধরে করা কঠিন, যা আপনি পছন্দ করেন না। এতে আপনার পক্ষে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে শ্রেষ্ঠ দক্ষতা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না, প্রতিষ্ঠানেরও ক্ষতি হয়।
* আপনার বসের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? একজন অধস্তনের জন্য একজন ভালো বস অনেক বড় ব্যাপার। আপনার ক্যারিয়ার অনেকাংশেই তার ওপর নির্ভরশীল। একটি চাকরি ভালো কি না তা অনেকখানি নির্ভর করছে আপনি কতটা ভালো বসের অধীনে কাজ করছেন।
* আপনার সহকর্মী ও অধস্তনদের সামাজিক অবস্থান ও তাঁদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক একটি ভালো চাকরির বিশেষ মাপকাঠি। তাঁদের সঙ্গে আপনার কতটা খাপ খায়।
* অফিসের ভেতরে ও বাইরে আপনার প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকা চাই। নইলে আপনার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার পথ রুদ্ধ। একটি ভালো চাকরিতে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধির পথ হবে আকাশ জোড়া বিস্তৃত।
* আপনার ভবিষ্যৎ যাত্রা উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য বর্তমান চাকরি কতটা সহায়ক, সেটা সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত।
এমনই আরো অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে, যা একটি ভালো চাকরির মানদণ্ড হতে পারে। যত কম কাজ, চাকরি তত ভালো_এ ধারণায় যাঁরা পথ চলছেন তাঁদের সময় এসেছে নিজেকে শুধরে নেওয়ার।
akhter.bst@gmail.com
 
 
Home, About, Contuct,
Copyright © Careers BD