সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে বদাভ্যাস দূর করুন

প্রত্যেক মানুষের কোন না কোন মুদ্রাদোষ থাকে। আমরা সচেতন বা অবচেতন মনে অনেক কিছুই করে থাকি। কিন্তু যারা কর্মজীবী তারা যদি অফিসে কাজের ফাঁকে তাদের মুদ্রাদোষ অব্যাহত রাখে তা হলেতো অফিসের পরিবেশ নষ্ট হয়।
দেখা গেল অফিস কলিকগদের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন আলোচনা চলছে, তাদের মধ্যে কেউ একজন দাঁত, নাক, নখ খুটছে। পাশের জন বিষয়টি দেখছে কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলছে না। মুখে কিছু না বললেও নেতিবাচক একটি ধারণ তৈরী হয়। হাতের নখ কামড়ানো। বারবার পা নাড়ানো, জোরে জোরে হাত নেড়ে বা আঙুল তুলে কথা বলা, মাথা চুলকানো, নাকের ভেতর আঙুল দিয়ে চুলকানো, হাতের কাছে লম্বা কিছু পেলেই কানে ঢুকিয়ে দেয়া, আঙ্গুল ফোটানো, পাশের কলিগকে অহেতুক বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করা। নিজের অজান্তেই অনেকের এগুলোর চর্চা করে। বাড়ির লোকেরা তেমন খেয়াল না করলেও, কর্মক্ষেত্রে এ সব নিয়ে সমস্যা হয়। অনেকের কাছে চরম বিরুক্তির কারণ হতে পারে।
কী করবেন
ঠিক সময়ে অফিসে যান। অফিসের টেলিফোনে দীর্ঘক্ষণ খোশ-গল্পে মশগুল না থাকাই ভালো। কারো সাথে অ্যাসাইনমেন্ট থাকলে নির্ধারিত সময়ে জায়গামত পোঁছতে হবে। নিজের মধ্যে এসব ভালো গুণগুলো আয়ত্ব করতে হবে, তা হলে নিজের ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে পারবেন।
মুদ্রাদোষ বা বদাভ্যাস কী
মুদ্রাদোষ ও বদাভ্যাসের মধ্যে পার্থক্য হলো, মুদ্রাদোষ ঘটে মনের অজান্তে আর বদাভ্যাসের প্রকাশ ঘটে অনেকটা সচেতনভাবেই। অফিসে কারো পেছনে লেগে থাকা, কারো ব্যক্তিগত বিষয় সবার সাথে শেয়ার করা বা কারো দোষ সবার কাছে বলে বেড়ানো এগুলো বদাভ্যাসের পর্যায়ে পড়ে।
আর মুদ্রাদোষ খুব একটি স্বাভাবিক বিষয় নয়। মুদ্রাদোষ আর কিছু নয়,  সচেতনতার অভাব। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ বিষয়টি খুব সহজভাবে নেয় না।  মুদ্রাদোষের কারণে বদলি বা চাকরি থেকে কৌশলে সরিয়ে নেয়ার নজিরও আছে। তাই নিজের মুদ্রাদোষকে স্বাভাবিকভাবে না নেয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
নিজেকে বদলান
মুদ্রাদোষ বা বদভ্যাস যাই বলি না কেন সবই বদলানো সম্ভব। আমাদের সদিচ্ছা থাকলেই এই সব অভ্যাস দূর করা যায়। মুদ্রাদোষ দূর করতে নিজের চেষ্টাই যথেষ্ট। নিজের মুদ্রাদোষ শনাক্ত করে সবসময় সচেতন থাকতে হবে। যিনি আনমনে বারবার পা নাড়ান, তার বসার ধরন বদলে ফেলতে হবে। হাত পেছনে রেখে কথা বলার অভ্যাস করতে পারেন।
অপরের সাহায্য নিতে পারেন
নিজেকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সহকর্মীদের জানিয়ে রাখুন, যেন তারা সেই সময়টায় থামিয়ে দেন বা মনে করিয়ে দেন। নিয়মিত ব্যায়াম এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে অবশ্যই মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আরো কিছু নিয়ম
কাজের সময় অফিসে গল্পে মেতে থাকবেন না। খুব জোরে হাসি অন্যের বিরুক্তির কারণ হতে পারে। অফিসে যাতে দেরি না হয় তাই ঘড়ি বা মোবাইল ফোনে অ্যালাম দিন। কখনই নিজের কাজ অন্যের উপর চাপিয়ে দিবেন না। প্রয়োজনে সহকর্মীর কাছ থেকে সাহায্য নিন। ত্রুটিপূর্ণ অভ্যাস রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। ধৈয্য ধরে চেষ্টা করে যেতে হবে। একসময় দেখবেন বদভ্যাস বা মুদ্রাদোষ পরিবর্তিত হলে নিজেকে অনেক হালকা লাগবে।

মৌমাছি ও মধু ফার্ম: প্রয়োজনীয়তা

১. মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের সময় সাধারণত চাকটিকে নষ্ট করে ফেলা হয়। এ কাজের সময় অনেক ক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক মৌমাছিও মারা পড়ে। এছাড়াও চাকে অবস্থিত ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হয়। এর ফলে দিন দিন মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ইদানিং ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে লোকালয়ে আশঙ্কাজনকভাবে মৌমাছির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এতেফসলের ফলনও কমে যাচ্ছে। মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মৌমাছির সংখ্যাকে বাড়ানো সম্ভব।

২. মৌমাছির বঞ্চিত মধু আমরা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকি। মধুর পুষ্টিগুণ চাড়াও নানাবিধ রোঘ উপশমকারী ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণ নিয়মে মৌচাক চেপে মধু বের করা হয়। এতে চাক থেকে মধু নিষ্কাশন যেমন সম্পূর্ণ হয় না তেমনি সেই মধুতে রয়ে যায় মোম, মৌমাছির ডিম ও বাচ্চা নিস্পোষিত রস এবং অন্যান্য আবর্জনা। পালন করা মৌমাছির চাক থেকে যান্ত্রিক উপায়ে নিষ্কাশিত মধু যেমন বিশুদ্ধ, তেমনি নিষ্কাশনও হয় পুরোপুরি।

৩. মৌচাক থেকে মোম পাওয়া যায়, কিন্তু পালন করা মৌমাচির চাক থেকে মোম সংগ্রহ করা হয় না। মোম সংগ্রহ করলে চাক ষ্ট হয়। নতুন চাক বানাতে মৌমাছির অনেক সময় লাগে। এতে মধু নিস্কাশনের পর চাক অক্ষত থাকে বলে মৌমাছিরা সাথে সাথেই আবার শুন্য কুঠুরিগুলোয় মধু মেন বিশুদ্ধ, তেমনি নিষ্কাশনও হয় পুরোপুরি।

৪. মৌচাক থেকে মোম পাওয়া যায়, কিন্তু পালন করা মৌমাছির চাক থেকে মোম সংগ্রহ করা হয় না। মোম সংগ্রহ করলে চাক নষ্ট হয়। নতুন চাক বানাতে মৌমাছির অনেক সময় লাগে। এতে মধু নিষ্কাশনের পর চাক অক্ষত থাকে বলে মৌমাছিরা সাথে সাথেই আবার শুন্য কুঠুরিগুলোরয় মধু জমাতে থাকে। এছাড়া মৌ-বাক্সে ভেতরে যে কাঠের ফ্রেম থাকে তাতে মোমের তৈরি ছাঁচ বা 'কম্ব ফাউন্ডেশন সিট' দিলে মৌমাছিরা তাড়াতাড়ি চাক তৈরি করতে পারে। এজন্য মৌমাছি পালনের মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক বেশী মধু পাওয়া সম্ভব।

৫. ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছিরা তাদের পা এবং বুকের লোমের ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়লে পরাগায়ন ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় ফল। এভাবে মৌমাছিরা পরাগায়নের মাধ্যমে হিসাবে কাজ করে ফল ও ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। বিশেষ মৌসুমে যখন কোনো বাগান বা ফসলের ক্ষেতে প্রচুর ফুল ফোনে তখন মৌমাছিসহ বাঙ্টিকে সেখানে স্থানান্তর করলে একদিকে প্রচুর মদু সঙ্গৃহীত হবে, অন্যদিকে ফল বা ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।

৬. মৌমাছি পালনকে কুটির শিল্প হিসাবে গ্রহণ করলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থার হবে। গ্রামের স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে মৌমাছি পালন একটি বাড়তি আয়ের সুযোগ দেবে।

মৌ কলোনির পরিচর্যা

আমাদের দেশে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত মধু সংগ্রহের উত্তম সময়। এছাড়াও কোনো কোনো এলাকায় ব্যতিক্রম হিসেবে অনুকূল পরিবেশে উল্লিখিত সময় ছাড়াও মধু সংগ্রহ করা যায়।

নিচে মধুঋতু পরিচর্যার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো :
» এলাকার বি-প্লান্টসের পরিচর্যা করা।
» অধিক মধু সংগ্রহের জন্য কলোনি পর্যাপ্ত বি-প্লান্টস পরিবেষ্টিত এলাকায় সাময়িকভাবে স্থানান্তর করা।
» নির্ধারিত ফুল ফোটার সময়ে মধু পাওয়ার জন্য প্রয়োজনবোধে কলোনি একত্রীকরণের ব্যবস্থা করা।
» চলাচল দরজার সম্পূর্ণ অংশ দিনের বেলায় খুলে দেয়া। তবে ঝাঁক ছাড়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হলে অবশ্যই কুইনগেট লাগাতে হবে।
» কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্রুড ও সুপার চেম্বারের মাঝে কুইন এক্সক্লুডার স্থাপন আবশ্যক।
» রানী মৌমাছির অধিক ডিম দেয়ার সুবিধার্থে ব্রুড চেম্বারে ভিত্তিচাক এবং পুরনো ভালো চাক পর্যায়ক্রমে দুটি ফ্রেমের মাঝখানে স্থাপন করা দরকার।
» একইভাবে সুপার চেম্বারেও অধিক মধু জমানোর জোগান দেয়াসাপেক্ষে ভিত্তিচাক এবং পুরনো ভালো চাক স্থাপন করা যায়।
» সুপার চেম্বারে শতকরা ৭০ ভাগ মধু জমানো কোষে ঢাকনা দিলে মধু নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করতে হবে।
» মধুঋতু শেষে সর্বশেষ মধু সংগ্রহের সময় মধুসহ কমপক্ষে একটি চাক কলোনিতে রেখে দিতে হবে।
» কোনো কারণে যথাসময়ে মধু সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে সাময়িকভাবে আরও একটি সুপার চেম্বার স্থাপন করা শ্রেয়।
» বিনা প্রয়োজনে পুরুষ ও রানী কোষ তৈরি করে থাকলে তা কেটে বাদ দিতে হবে।
» সংগৃহীত মধু আধুনিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে পরিষ্কার এয়ারটাইট পাত্রে রাখতে হবে।
» মধুঋতু শেষে সুপার চেম্বারের সব চাক এবং ব্রুড চেম্বারের অতিরিক্ত চাকগুলো রৌদ্রে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
» কোনো কোনো সময় কলোনিতে পর্যাপ্ত মৌমাছি থাকা সত্ত্বেও শ্রমিক মৌমাছির দ্বারা সুপার চেম্বারে চাক তৈরি করতে অনীহা প্রকাশ পায় কিংবা চাক দিলেও তাতে মধু জমা করে না। এসব ক্ষেত্রে ব্রুড চেম্বার থেকে ২/১টি চাকের উপরের অংশ মধুসহ (আংশিক/সম্পূর্ণ) কেটে সুপার ফ্রেমের সঙ্গে লাগিয়ে সুপার চেম্বারে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া অন্য কোনো কলোনি থেকেও মধুসহ চাক সুপার ফ্রেমে এনে এধরনের কলোনির সুপার চেম্বারে স্থাপন করা যেতে পারে।
» মধুঋতুর শেষ পর্যায়ে কিছু কিছু মৌ কলোনি বিভাজন করে কলোনির সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।
» এতদ্ব্যতীত প্রয়োজন সাপেক্ষে রুটিনমাফিক পরিচর্যাও অব্যাহত রাখতে হবে। বিস্তারিত তথ্য জানতে হলে ফোন করা যেতে পারে।
লেখক : মো. আলী আশরাফ খান, মোবাইল নং-০১৭১০৪০৭০৭৪, ০১১৯৯৪২৫৫২৩, ০১৯১১৪০৫৩৬৬

মৌমাছি ও মধু ফার্ম: আয়-ব্যয়ের হিসাব

মৌমাছি পালন প্রকল্প স্থাপনের জন্য আলাদাভাবে কোনো জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আনাচে-কানাচে, ঘরের বারান্দায়, ছাদে কিংবা বাগানেও মৌ-বাক্স রাখা যায়। অ্যাপিস সেরানা প্রজাতির ৫টি মৌ-কলোনি সম্বলিত মৌ-খামার স্থাপনের জন্য মোট বিনিয়োগ হবে ১৫-১৬ হাজার টাকা। প্রতিবছর গড়ে প্রতি বাক্স থেকে ১০ কেজি মধু পাওয়া যাবে, যার বাজারমূল্য ২৫০ টাকা হিসেবে ২৫০০ টাকা। এ হিসেবে ৫টি বাক্স থেকে উত্পাদিত মধুর মূল্য দাঁড়াবে ৫–১০ কেজি – ২৫০ টাকা (প্রতি কেজি)= ১২,৫০০ টাকা। এই আয় ১০-১৫ বছর অব্যাহত থাকবে অর্থাৎ প্রথমে মাত্র একবার ১৫-১৬ হাজার টাকা ব্যয় করে প্রকল্প স্থাপন করলে মৌ-বাক্স এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি ১০-১৫ বছর ব্যবহার করা যাবে। আর কোনো বিনিয়োগ বা খরচ নেই বললেই চলে।

অন্যদিকে অ্যাপিস মেলিফেরা প্রজাতির ৫টি মৌ-কলোনি সম্বলিত মৌ-খামার স্থাপনের জন্য মোট ব্যয় হবে ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা। এক্ষেত্রেও ১০-১৫ বছর পর্যন্ত মৌ-বাক্স ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা যাবে। আর কোনো অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে না। মেলিফেরা প্রজাতির প্রতিটি মৌ-বাক্স থেকে বছরে ৫০ কেজি পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করা সম্ভব, যার বাজারমূল্য ৫০ কেজি –২৫০ টাকা (প্রতিকেজি) – ৫টি বাক্স= ৬২,৫০০ টাকা। প্রকল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে মাত্র ২৫-২৭ হাজার টাকা এককালীন বিনিয়োগ করে প্রতিবছর ৬০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে আয় করা সম্ভব। মৌ-বাক্সের সংখ্যা প্রতিবছর বৃদ্ধির মাধ্যমে এ আয় অনেকগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। স্বল্প পরিশ্রমে এ ধরনের প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে একদিকে যেমন আর্থিক দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়, তেমনি পরাগায়ন প্রক্রিয়ায় সহায়তা দানের মাধ্যমে দেশের ফল ও ফসলের উত্পাদনে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা দান করা যায়।

মৌমাছি ও মধু ফার্ম: উপযুক্ত পরিবেশ ও পালন

উপযুক্ত পরিবেশ : 
মৌ-বাক্স রাখার জন্য নির্বাচিত স্থানটি ছায়াযুক্ত, শুকনা ও আশপাশে মৌমাছির খাদ্য সরবরাহের উপযোগী গাছ-গাছড়া দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনে কিছু কিছু ঋতুভিত্তিক গাছ জরুরি ভিত্তিতে লাগানো যেতে পারে। নির্বাচিত স্থানের আশপাশে যেন বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী এবং ধোঁয়া উত্পাদনকারী কোনো কিছু না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

পালন
যে কাঠের বাক্স মৌমাছি পালন করা হয় সেটি বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে তৈরী। তলার কাঠ, বাচ্চাঘর, মধুঘর, ঢাকনা, ও ছাদ হচ্ছে একটি মৌবাঙ্রে বিভিন্ন অংশ। মধুঘর ও বাচ্চাঘরে সারি সারি কাঠের ফ্রেম সাজিয়ে দেয়া হয়। এ ফ্রেমেই মৌমাছিরা চক তৈরি করে। কোনো গাছের গর্ত থেকে মৌমাছি ও তাদের চাক সংগ্রহ করার পর বাক্স দেয়া হয়। একটি মৌমাছি পরিবারে থাকে মাত্র একটি রানী মৌমাছি, কিছু পুরুষ এবং অধিকাংশ শ্রমিক মৌমাছি। চাক তৈরি, বাচ্চাদের লালনপালন, মধু এবং ফুলের পরাগ সংগ্রহ ইইত্যাদি সব কাজ শ্রমিক মৌমাছিরাই সম্পাদন করে। কিন্তু মৌমাছি পালন করে চাক থেকে মধু পেতে হলে একজন মৌমাছি পালককে মৌমাছিদের যত্ন নিতে হবে। বছরের বিভিন্ন ঋতুতে নানা প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এদের রোগ প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া মৌমাছি পালন তথ্য পরিচর্যার অন্তভূর্ক্ত । এখানে সংক্ষেপে এ নিয়ে কিছু আলোচনা করা হল-

ক) মৌসুমী ব্যবস্থাপনা
বিভিন্ন ঋতুতে মৌমাছির পরিচর্যাকে তিনটি ভগে ভাগ করা যায়। যেমন-মৌমাছির বংশ বৃদ্ধির সময়ে, যখন প্রকৃতিতে প্রচুর খাদ্য পাওয়া যায় তখন এবং খাদ্যসঙ্কট চলাকালে।
১. বংশ বৃদ্ধিকালে-রানী মৌমাছি যখন প্রচুর ডিম পেড়ে একটি মৌবাঙ্রে মৌমাছির সংখ্যা বাড়তে থাকে সে সময়টাই হল বদ্ধিকাল। এ সময় প্রকৃতিতে ফুলের সমারোহ দেখা যায় এবং মৌমাছিরা প্রচুর পরিমানে পরাগরেণু এবং ফুলের রস সংগ্রহ করে। বংশ বৃদ্ধিকালে বাচ্চাঘরে নতুন ফ্রেম দিতে হবে। বাঙ্ কোনো পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ রাণীকে সরিয়ে নতুন রানীর সংযোজন করতে হবে। সাধারণত বৃদিধকালের শেষ দিকে মৌমাছিরা ঝাঁক বাঁধে। ঝাঁক বেঁধে মৌমাছিরা যাতে অন্য কোথাও উড়ে চলে না যায় এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। চাকে নবনির্মিত পুরুষ, রাণী মৌমাছিরা বাঁক বেঁধে অন্য কোথাও উড়ে যাবে না। মৌমাছির সংখ্যা যদি অনেক বেশী হয় তবে তাদের একাধিক বাক্স ভাগ করে দেয়া উচিত মৌমাছির বংশ বৃদ্ধিকালে মাঝে মাঝে কলোনী পরীক্ষা করে তাদের অন্যান্য সমস্যার প্রতিও দৃস্টি রাখতে হবে।

২. খাদ্য সঞ্চয়কালে-এ সময়ে প্রকৃতিতে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। মৌমাছিদের সংগ্রহীত পরাগরেণু বাচ্চা মৌমাছিদের খাওয়ানো হয়। ফুলের রস দিয়ে মৌমাছিরা মধু তৈরি করে মধুঘরের চাকে জমা করে। মধু রাখার স্থানের যাতে অভাব না হয় এজন্য মধু ঘরে আরও নতুন চাক দিতে হবে। চাকের শতকরা ৭৫টি কঠুরি যখন ঘন মধুতে ভরে মৌমাছিরা ঢাকনা দিয়ে ফেলবে, তখন সে চাক থেকে মদু নিষ্কাশন করে নিতে হবে। প্রয়োজনবোধে মৌমাছি পালনক্ষেত্র তেকে কিছু মৌবাক্স সরিয়ে অন্য স্থানে নিতে হবে যাতে বিশেষ কোনো এলাকা থেকে মৌমাছিরা আরও বেশী মধু সঞ্চয় করতে পারে। শীতের প্রচন্ড প্রকোপে মৌমাছিদের যেন কষ্ট না হয় এজন্য শীতের রাতে মৌবাঙ্টি চট বা ছালা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

৩. খাদ্য সঙ্কটকালৈ এ সময়ে প্রকৃতিতে খাদ্য সংগ্রহ করার মতো ফুল খুব কম থাকে, ফলে মৌমাছিরা খাদ্য সঙ্কটে পড়ে। খাবারের অভাব মিটাতে এ সময় চিনির সিরাপ মিশিয়ে এই সিরাপ তৈরি করা হয়। যে পাত্রে সিরাপ পরিবেশন করা হবে সেটি বাঙ্রে ভেতরে রেখে সিরাপের পরে একটি কাঠি বা পাতা দিতে হবে, যাতে মৌমাছিরা তার ওপরে বসে রস খেতে পারে। সিরাপ রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সন্ধ্যা) পরিবেশন করা উচিত, যাতে অন্য বাঙ্রে মৌমাছিরা এসে খাবারের জন্য মারামারি না বধায়। ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে মৌবাঙ্টির প্রবেশ পথ বাতাস ও বৃদ্ধির বিপরীতমুখী করে নিরাপদ, শুল্ক স্থানে রাখতে হবে। অন্যথায় বাক্সে ছাদের উপর আবরণ দিয়ে প্রবল বৃষ্টি হাত থেকে মৌমাছিদের রক্ষা করতে হবে। খাদ্য সঙ্কটকালে কলোনী দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। বাক্স চারটি চাকের কম সংখ্যাকে চাকে মৌমাছি একত্র করে একটি মৌবাক্স স্থান করে দেয়া উচিত। খাদ্য সঙ্কট সব এলাকায় একই সময়ে দেখা দেয় না। এ জন্য মৌবাক্স এমন এলাকায় স্থানান্তর করা যায়, যেখানে প্রচুর ফুল পাওয়া যাবে। খাদ্য সঙ্কটকালে মৌমাছিদের রোগ-জীবানূ বেশী হয় বলে এ সময় কলোনীর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

খ) শত্রু এবং রোগ
বিভিন্ন প্রকার শত্রু ও রোগের আক্রমনে মৌমাছি কলোনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দু'একটি প্রধান শত্রু ও রোগের বিষয়ে এখানে আলোচনা করা হলে। মোমপোকা-ভিজে, স্যাতসেঁতে আবহাওয়ায় মোমপোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশী হয়। চাকের কুঠুরির উপরে মাকড়সার জালের ন্যায় আবরণ দেখেই বোঝা যায়। একটি মোপোকারয় আক্রান্ত ঢাকনাযুক্ত পিউপার কুঠুরির মুখ খোলা এবং ভেতরে মৃত পিউপা পাওয়া যায়। এ সমস্যার প্রতিকার হল মৌবাক্স পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পুরনো ও ময়লা চাক সরিয়ে ফেলা এবং পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে বাঙ্রে মেঝে পরিস্কার করা। মোমপোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্যারাডাইক্লোরো বেনজিন নামক ওষুধ সামান্য পরিমানে বাক্স কোণায় রেখে দিলে এই পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ময়ে রাতে বাক্সের গেইট বন্ধ করে রাখতে হবে এবং সকালে খুলে দিতে হবে। অ্যাকারাইন এ রোগ সাধারণত পূর্ণবস্ক মৌমাছিদের হয়ে থাকে। রুগ্ন মৌমাছির ডানাগুলো বিভক্ত হয়ে ইংরেজি অক্ষর 'ক' এর মতো হয়ে যায় এবং অনেক মৌমাছিকে বাক্সে সামনে বুকে হাঁটতে দেখা যায়। বাক্সে সামনে আমাশয় এর মতো হলুদ পায়খানা পড়ে থাকে। মৌমাছিরা কলোনীর মধ্যে বিশৃংখলাভাবে ঝাঁক বেঁধে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্যারালাইসিস হতে দেখা যায়। আক্রান্ত রানী ডিম দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ্যাকারাইন হতে দেখা যায়। এ্যাকরাইন রোগের প্রতিকার হল-মৌবাঙ্রে ভেতরে মিথাইল স্যালিসাইলেটের বাষ্প দেয়া। এজন্য ছোট একটি বোতলে মিথাইল স্যালিসাইলেট নিয়ে রবার কর্ক দিয়ে মুখ বন্ধ করতে হবে।
মৌমাছি চাষ ও প্রশিক্ষনের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন
মতি এন্ড সন্স (একটি বিসিক প্রকল্প)
৪৯/৩, লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, কোতয়ালী, ঢাকা
মোবাইল: ০১৭১২-০৬৯০৬২
এছাড়া মৌমাছি পালন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে বিসিকের যে কোনো কার্যালয়ে যোগাযোগ করা যেতে পারে। টেলিফোন করতে পারেন : ০১১৯৯৪২৫৫২৩, ০১৭১০৪০৭০৭৪ অথবা ০১৯১১৪০৫৩৬৬ নম্বরে।

কর্মজীবীদের করনিয়

যতই ঝামেলা থাকুক, কর্মজীবীকে মানিয়ে চলতেই হবে কাজের জায়গায়। ঠিক রাখতে হবে শরীর-স্বাস্থ্য আর স্মার্টনেস। কর্মজীবী পুরুষদের জন্য রইল বেশ কিছু টিপস

* সকালে একটু আগেভাগেই ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। মনও যেমন ফুরফুরে থাকবে আর সময়মতো কর্মক্ষেত্রে পৌঁছে কাজে মন দেওয়াটাও সহজ হবে।
* যাঁরা সারা দিন অফিস বা কর্মক্ষেত্রে থাকেন, তাঁদের সকালে গোসল করে বের হওয়া ভালো। এতে আপনাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত লাগবে, কাজের প্রতিও আগ্রহ বাড়বে।
* অফিস থেকে ফিরে আবার গোসল করে নিতে পারেন। সারা দিনে শরীরে জমা ময়লা আর ক্লান্তি দুই-ই দূর হয়ে ঘুমটা অনেক ভালো হবে।
* প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করার অভ্যাস করুন। সুগন্ধি সাবান বাদ দিয়ে ডেটল-জাতীয় সাবান ব্যবহার করা ভালো। এগুলো রোগজীবাণু প্রতিরোধে বেশি কার্যকর।
* পরের দিন কী কী কাজ করবেন বা কার সঙ্গে কখন দেখা করবেন, তা আগের দিন রাতে ঘুমানোর আগেই পরিকল্পনা করে রাখুন। মনে না থাকার আশঙ্কা থাকলে ডায়েরি, মোবাইল ফোন বা নির্দিষ্ট কোথাও নোট করে রাখতে পারেন। এতে পরের দিন পরিকল্পনামাফিক কাজ করা সহজ হবে।
* বেশি রাত জাগার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। এতে সকালের ঘুম ভাঙতে দেরি ও কষ্ট হয়, কাজেরও ক্ষতি হয়। বেশি দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে আপনার সারা দিনের পরিকল্পনাই এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া রাত জাগা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
* কর্মক্ষেত্রের একাধিক পোশাক রাখুন। এক পোশাক বারবার না পরে এক দিন পরার পরই ধুয়ে ফেলুন। সব সময় ধোয়া ও আয়রন করা কাপড় পরার চেষ্টা করবেন।
* ঘামের দুর্গন্ধে যেন আপনার পাশের লোকটির কষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে ডিওডরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
* সুগন্ধি অর্থাৎ পারফিউম বা বডি স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই তা যেন খুব বেশি কড়া না হয়।
* এক থেকে তিন দিন পর পর চুলে শ্যাম্পু করুন। শ্যাম্পু করার পর চুল শুকিয়ে তাতে হেয়ার ক্রিম, জেল বা হারবাল অয়েল দিতে পারেন। এতে চুলের সৌন্দর্য বাড়বে।
* রোদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সানস্ক্রিনসমৃদ্ধ জেন্টস ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
* অনেকের সারা বছরই ঠোঁট ফাটে। তাঁরা লিপজেল সঙ্গে রাখুন।
* ত্বকের বাড়তি যত্ন নিতে জেন্টস উপটান ব্যবহার করুন। জেন্টস পারলার থেকে মাসে একবার ফেসিয়ালও করাতে পারেন।
* বাইরের ধুলাবালির কারণে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়। সে ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করলে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়। রুমালও ব্যবহার করা যেতে পারে।
* সব সময় সঙ্গে রুমাল ও টিস্যু পেপার রাখুন।
* বাসে বা পথঘাটে চলার ক্ষেত্রে মাথায় ক্যাপ পরলে বাইরের ধুলাবালি থেকে চুল বাঁচানো যায়।
* বাইরে রোদ ও ধুলাবালি এড়াতে ব্যক্তিত্ব ও পোশাকের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রোদচশমা ব্যবহার করুন।
* জুতা মোছার জন্য আলাদা একটি ছোট্ট রুমাল রাখতে পারেন।
* যেসব অফিসে পোশাক নির্দিষ্ট করে দেওয়া নেই, সেসব ক্ষেত্রে জাঁকালো বা চোখধাঁধানো পোশাক পরিহার করে মার্জিত ও ভদ্র পোশাক পরুন।
* চুল ঝুঁটি, গলায় চেইন, হাতে আংটি_এগুলো সাধারণত পেশাদারি ক্ষুণ্ন করে।
* অনেক সময় মোজা না ধোয়ার ফলে দুর্গন্ধ হয়। মোজা নিয়মিত ধুয়ে ব্যবহার করুন।
* নিয়মিত চুল ও নখ কেটে ছোট রাখুন।
* গ্যাস্ট্রিক, অ্যালার্জি, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ থাকলে প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গেই রাখুন। কারণ প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে এসব নাও থাকতে পারে।

ভালো চাকরি কী এবং কেন?

অনেকেই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিকে শ্রেষ্ঠ চাকরি মনে করেন। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন সরকারি চাকরি শ্রেষ্ঠ চাকরি, তাহলে যে উত্তর পাওয়া যাবে সেগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঠিক গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি কারণগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যও নয়। তাহলে ভালো চাকরি বলতে আমরা আসলে কী বুঝব? ভালো চাকরির বৈশিষ্ট্য কী হওয়া উচিত?

ভালো চাকরি বলতে অনেকেই যা মনে করেন
* ফিসে বসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে কাজ করতে হয় (আসলে কাজ কিছুই না, হাজিরা দিলেই চলে)। আধুনিক ইন্টেরিয়র। আলাদা রুম, টেবিল-চেয়ার, আলাদা ফোন। অফিসের বাইরে রোদ-বৃষ্টিতে ঘোরাঘুরির কোনো কাজ নেই।
* বেতন যা প্রয়োজন তার দ্বিগুণ। তা ছাড়া মোবাইল ফোনের বিল অফিস দেয়।
* অফিস ৯টা থেকে ৫টা। ছুটির দিনে অফিসে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।
* সপ্তাহে দুদিন ছুটি। শুক্র ও শনি।
* বেতনের পাশাপাশি বোনাস, ভাতা, ইনসেনটিভ, ওভারটাইম, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং এ বিষয়ক আর যা যা হতে পারে তার সবই আছে।
* গাড়ি এসে বাসা থেকে নিয়ে যায়, আবার বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায়।
* দুপুরে খাওয়ার জন্য অফিসে ক্যান্টিন আছে, বাসা থেকে খাবার নিতে হয় না।
* প্রশাসন কড়াকড়ি নয়। মাঝে দেরি করে গেলেও বস কড়া কথা বলেন না। উপরন্তু চাইলেই ছুটি পাওয়া যায়। এ ছাড়া বার্ষিক ছুটি, অসুস্থ থাকার ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি ও অন্যান্য সব ছুটির ব্যবস্থা আছে। ছুটি না নিলে টাকা পাওয়া যাবে। বার্ষিক ছুটি নিলে ছুটি কাটানোর ভাতা পাওয়া যাবে।
* মেয়েদের ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বাচ্চাদের জন্য অভ্যন্তরীণ ডে-কেয়ার। অসুস্থ হয়ে নিজে হাসপাতালে ভর্তি হলে সব খরচ অফিসের। আর নিকটাত্মীয় ভর্তি হলে ৭৫ শতাংশ খরচ অফিসের।
* প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা হোক বা না হোক মাসের ৫ তারিখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রস্তুত। উপরন্তু বদলি হওয়ার আশঙ্কা নেই। সেই সঙ্গে বছর বছর পদোন্নতি, নইলে বেতন তো বাড়বেই।
উপরোলি্লখিত বৈশিষ্ট্যগুলো এক সময় ভালো বা শ্রেষ্ঠ চাকরির মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে শ্রম আইন অনুযায়ী এর অনেক বৈশিষ্ট্যই অত্যাবশ্যক। ভালো বা মন্দ বলে কিছু নেই। এটা শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের অধিকার। সময় পাল্টেছে, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে, ভালো চাকরির মাপকাঠিও আরো আধুনিক হয়েছে। কাজ করতে হবে না; কিন্তু অনেক বেতন পাওয়া যাবে_এটা একজন শিক্ষিত ও মেধাবী কর্মকর্তার কাছে ভালো চাকরি হতে পারে না।

ভালো চাকরির ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রাখা উচিত
* প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি বা প্রতিষ্ঠান কতটা বিখ্যাত এটা একটা ভালো চাকরির সাধারণ মাপকাঠি।
* আপনার ক্যারিয়ারের সঙ্গে আপনার পদ কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। ধরুন, আপনি বিপণন বিষয়ে পারদর্শী। প্রতিষ্ঠান আপনাকে যদি দীর্ঘদিন ধরে ভোক্তাসেবা বিভাগে নিযুক্ত রাখে, আপনি কি এমন অবস্থায় এ চাকরিকে ভালো চাকরি বলবেন? নিশ্চয়ই না।
* আপনার পদ ও যোগ্যতার সঙ্গে সমন্বয় থাকা দরকার। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে মানানসই না রেখে যদি দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে আপনাকে ব্যবস্থাপক বা বিভাগীয় প্রধান করা হয়, তাতে সত্যিকার অর্থে আনন্দিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং আতঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, এই পদে একজনকে যে দক্ষতা প্রদর্শন করতে হয় তা আপনার নেই বলে এই পদে আপনার সফল হওয়া অনেক কঠিন। দ্বিতীয়ত, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হারিয়ে দেওয়া আপনার জন্য একই কারণে কঠিন হবে। আবার যুক্তিসংগতভাবে এর চেয়ে নিচের পদেও নামতে পারবেন না। এ এক মহাবিপদ! ফলে যেসব প্রতিষ্ঠানে বা চাকরিতে যোগ্যতা যাচাই না করেই দ্রুত একের পর এক পদোন্নতি দেওয়া হয়, তা চাকরিজীবীর জন্য শুভ সংবাদ নয়।
* চাকরিতে কাজ করতে করতে আপনার শেখার সুযোগ থাকা চাই। এমন কাজ করছেন যেখানে আপনার আর শেখার কিছু নেই। একই কাজ মাসের পর মাস, বছরের পর বছর করেই যাচ্ছেন, নতুন কিছু শেখার নেই, সে চাকরি ভালো চাকরি হতে পারে না। দায়িত্ব একই হতে পারে; কিন্তু তাতে আপনার দক্ষতার স্তরের পরিবর্তন হতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদোন্নতিও হতে হবে। তবেই তাঁকে ভালো চাকরি বলা যেতে পারে।
হঅফিসে নারী-পুরুষের একসঙ্গে কাজ করার পরিবেশ। বিশেষ করে নারী কর্মজীবীদের নিরাপত্তা, সম্মান ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে কাজ করতে পারার সুযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বেশি বেতনের বা উচ্চতর পদবির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
* আপনি যে কাজ পছন্দ করেন সে দায়িত্ব পেলেন কি না দেখে নেবেন। এমন কাজ খুব বেশি সময় ধরে করা কঠিন, যা আপনি পছন্দ করেন না। এতে আপনার পক্ষে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে শ্রেষ্ঠ দক্ষতা ব্যবহার করা সম্ভব হয় না, প্রতিষ্ঠানেরও ক্ষতি হয়।
* আপনার বসের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন? একজন অধস্তনের জন্য একজন ভালো বস অনেক বড় ব্যাপার। আপনার ক্যারিয়ার অনেকাংশেই তার ওপর নির্ভরশীল। একটি চাকরি ভালো কি না তা অনেকখানি নির্ভর করছে আপনি কতটা ভালো বসের অধীনে কাজ করছেন।
* আপনার সহকর্মী ও অধস্তনদের সামাজিক অবস্থান ও তাঁদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক একটি ভালো চাকরির বিশেষ মাপকাঠি। তাঁদের সঙ্গে আপনার কতটা খাপ খায়।
* অফিসের ভেতরে ও বাইরে আপনার প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকা চাই। নইলে আপনার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ার পথ রুদ্ধ। একটি ভালো চাকরিতে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধির পথ হবে আকাশ জোড়া বিস্তৃত।
* আপনার ভবিষ্যৎ যাত্রা উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য বর্তমান চাকরি কতটা সহায়ক, সেটা সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত।
এমনই আরো অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে, যা একটি ভালো চাকরির মানদণ্ড হতে পারে। যত কম কাজ, চাকরি তত ভালো_এ ধারণায় যাঁরা পথ চলছেন তাঁদের সময় এসেছে নিজেকে শুধরে নেওয়ার।
akhter.bst@gmail.com

বাংলাদেশের মৌমাছি, মৌচাষি ও মধু-বাণিজ্য

দিগন্তজুড়ে সরষেখেত। পাশে একটু উঁচু জায়গায় রাখা সারি সারি মৌমাছির বাক্স। ফুলের মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা ফিরছে ওই বাক্সে। কিছুক্ষণ পর পর বাক্সের চাক থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে মধু।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকার এমন দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। কৃষি কর্মকর্তারা জানালেন, চলনবিলের হাজার হাজার হেক্টর জমির ফুটন্ত সরষে ফুল থেকে মৌচাষিদের মধু সংগ্রহের নীরব বিপ্লব চলছে। প্রতিবছর এভাবে সারা দেশে ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করেন মৌচাষিরা। এর মাধ্যমে শুধু তাঁরাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন তা নয়, কৃষকের সরষে উৎপাদনও বাড়ছে।
মহিষলুটি এলাকায় ১০০ মৌবাক্স নিয়ে একটি তাঁবু গেড়েছেন সাতক্ষীরার আবদুল হামিদ। ক্যারিয়ার বিডি-কে তিনি জানালেন, কাঠের বাক্সে একটা রানি মৌমাছিসহ ২০০ থেকে ৩০০ মৌমাছি নিয়ে তৈরি হয় একটা মৌবাক্স।
প্রতিদিন সকালে এ বাক্সগুলো ফুটন্ত সরষে ফুলের খেতের পাশে রাখা হয়। মৌমাছিরা মধু এনে রাখে বাক্সের ফ্রেমে। এরপর মাছিমুক্ত করে ঘূর্ণমান ড্রামের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি মৌবাক্স থেকে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম মধু সংগ্রহ করা যায়। এভাবে মাস খানেকের মধ্যে অন্তত দুই টন মধু সংগ্রহ করা হয়। আয় হয় তিন থেকে চার লাখ টাকা। তাঁদের কাছ থেকে এই মধু কিনে নেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
হামিদের মতোই সাতক্ষীরা জেলার নাজিমুদ্দিন, মজিবুর, সিরাজুল, গোপালগঞ্জের রেদোয়ান হোসেনসহ আরও অর্ধশত মধু আহরণকারী এসেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, কয়েক বছর ধরেই সরষের মৌসুমে চলনবিল এলাকায় আসছেন মধু আহরণকারীরা। এবার তাড়াশেই পাঁচ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে সরষের চাষ হয়েছে। এখান থেকে কয়েক কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করবেন মৌচাষিরা। এই মধু কিনে নেবে এপি, স্কয়ারসহ দেশের বড় বড় কোম্পানি। আর শুধু আর্থিক বিবেচনায় নয়, এভাবে মধু আহরণের কারণে খেতে আর কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না।
শুধু তাড়াশ নয়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ—এই তিন উপজেলায়ও প্রতিবছর অনেক মৌচাষি মধু সংগ্রহের জন্য যান। ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, চলনবিল এলাকা ছাড়াও মানিকগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইলসহ দেশের আরও কয়েকটি এলাকায় সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের কাজ চলে।
মৌচাষিরা জানালেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে মধু উৎপাদন করছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মৌচাষি এবাদুল্লাহ আফজাল। তিনি বাংলাদেশ মৌচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৪ সালে এইচএসসি পাসের পর মৌচাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ২০টি মৌ পালন বক্স নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মৌ খামার শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর খামারে মৌ বক্সের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ টন অর্থাৎ প্রায় অর্ধকোটি টাকার মধু সংগ্রহ করেন তিনি।
এবাদুল্লাহ আফজাল ক্যারিয়ারস বিডি-কে বলেন, সরষে ফুল ছাড়াও একইভাবে কালোজিরার মধু, ধনিয়ার মধু ও লিচু ফুলের মধু হয়। সরষে থেকে মধু সংগ্রহের পর তাই মৌচাষিরা লিচু ও আমের মৌসুমে রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে যাবেন। মৌচাষিদের এই মধু এপি, মডার্ন হারবাল, হামদর্দ, ফেম, প্রশিকাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। মধুর গুণাগুণও অনেক। তাই বিদেশে এর চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ মৌচাষি কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায়, দেশে ছয় হাজার মেট্রিক টন মধুর চাহিদা আছে। সারা দেশে সমিতিভুক্ত সদস্য ৫০০। তারা গত বছর সারা দেশ থেকে দুই হাজার টন মধু সংগ্রহ করেছে, যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা।
সমিতির নেতারা কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৌচাষিরা ব্যাংক থেকে ঋণ পান না। মৌচাষিদের জন্য সরকারি কোনো সহযোগিতা নেই। দেশে মধু প্রক্রিয়াকরণ কারখানা এবং একটি মধু সংরক্ষণাগার দরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) সাতক্ষীরার উপব্যবস্থাপক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘দেশে এখন ছয় থেকে সাত হাজার টন মধুর চাহিদা রয়েছে। আর উৎপাদিত হচ্ছে তিন হাজার টন। যেসব মৌচাষি এ কাজে আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সাতক্ষীরার। এ কারণেই সরকার সাতক্ষীরায় আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মৌচাষ উন্নয়ন বিষয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
 
 
Home, About, Contuct,
Copyright © Careers BD